বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫ ২৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বদরুদ্দীন উমর আর নেই

ডেস্ক রিপোর্ট।।
ডেস্ক রিপোর্ট।।
প্রকাশিত: রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:২৬ পিএম
বদরুদ্দীন উমর আর নেই
দেশের প্রখ্যাত চিন্তক, প্রবীণ রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমর আর নেই। রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ৫ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন।
 
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
 

তিনি বলেন, ‘আজ অসুস্থ অবস্থায় বাসা থেকে স্পেশালাইজড হাসপাতালে আনার পর সকাল ১০টা ৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।  বিস্তারিত আমরা পরে জানাতে পারবো।’ 

বদরুদ্দীন উমর বামপন্থি রাজনীতিবিদ ও তাত্ত্বিক। রাজনৈতিক পরিচয় ছাড়িয়ে তিনি একজন লেখক, গবেষক ও বুদ্ধিজীবী। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন ও নানা প্রয়োজনের সময় তিনি দক্ষতার সঙ্গে বিশ্লেষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। বদরুদ্দীন উমর ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করন। ২০২৫ সালে তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন কিন্তু তিনি তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান।

Article large 1

দরুদ্দীন উমরের গবেষণামূলক কাজের মধ্যে রয়েছে ‘পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি' (তিন খণ্ডে), 'সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা', 'পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা ও সংস্কৃতি', 'বাঙালীর সমাজ ও সংস্কৃতির রূপান্তর', 'ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও উনিশ শতকের বাঙালী সমাজ' এবং 'চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাংলাদেশের কৃষক'।

বদরুদ্দীন উমরের পিতা আবুল হাশিম ছিলেন এই অঞ্চলে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, তিনি অখণ্ড বাংলার পক্ষে কাজ করেছেন, মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশের নেতা হিসেবে তার খ্যাতি ছিল। নানা অনিশ্চয়তায় ১৯৫০ সালে তারা ঢাকায় চলে আসতে বাধ্য হন। ১৯৫২ সালে সেই ভাষা-আন্দোলনে তার পিতা সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। পরে এই আন্দোলন নিয়ে উমর অসাধারণ অন্তর্দৃষ্টি, বিশ্লেষণ পদ্ধতি, কঠিন শ্রম দিয়ে গবেষণাকাজ সম্পন্ন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে উমর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গবেষণা প্রকল্পে কিছুদিন কাজ করার পর ১৯৫৬ সালে চট্টগ্রাম কলেজে দর্শন বিভাগে শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। এর কিছুদিনের মধ্যেই তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে যোগ দেন। ১৯৫৯ সালে তিনি পাকিস্তান সরকারের বৃত্তি নিয়ে ইংল্যান্ড যান এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কুইন্স কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন ও অর্থশাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জন করেন এবং দেশে ফিরে পুনরায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ খোলা হয় এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে উমর দর্শন বিভাগ ছেড়ে এই বিভাগ প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালন করেন। একপর্যায়ে ১৯৬৮ সালে তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে সরাসরি বিপ্লবী রাজনীতিতে যুক্ত হন।

Article large 2

১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ’৭১ সালের মার্চ পর্যন্ত পার্টির মুখপত্র গণশক্তি সম্পাদনা করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পার্টির লাইনের বিরোধিতা করে পার্টিতে পরপর দুটি দলিল প্রদান করেন। ডিসেম্বরে মতাদর্শিক কারণে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (ইপিসিপি) থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর  থেকে কমিউনিস্ট ভাবাদর্শের প্রসার ও নেতৃত্ব গড়ে তোলার কাজে মনোনিবেশ করেন। তিনি বাঙলাদেশ লেখক শিবির, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোট প্রভৃতি সংগঠনের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। 

‘আমার জন্ম হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান শহরে ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর, রোববার, দুপুর দুটোয়।’ নিজের জন্ম সম্পর্কে ‘আমার জীবন’ গ্রন্থের ভূমিকায় এভাবেই লিখেছিলেন বদরুদ্দীন উমর।

চলতি বছর লেখক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমরসহ ৮ বিশিষ্টজনকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে সরকার। তবে বদরুদ্দীন উমর পুরস্কারটি ফিরিয়ে দেন।

এ বিষয়ে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘১৯৭৩ সাল থেকে আমাকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আমি সেগুলোর কোনোটি গ্রহণ করিনি। এখন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করেছে। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ। কিন্তু তাদের দেওয়া এই পুরস্কারও গ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এই প্রেস বিবৃতির মাধ্যমে আমি এটা জানিয়ে দিচ্ছি।’

Article large 3
Loading...
×